সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান বেশ প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তা। কারণ মন্ত্রী মোহদয়ের খাস লোকদের নেক নজর একটু বেশী রয়েছে তাঁর উপরে। জাফলং পর্যটক নিপিড়ন আর নির্যাতন কান্ডে তার উপরে বেশ ক্ষিপ্ত স্থানীয় সংসদ প্রবাসী কল্যান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। সর্বশেষ জেলার পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন যদি দ্রুত প্রদক্ষেপ নিয়ে নির্যাতনকারীদের আটক না করলে সিলেটের ভাবমুর্তির বারোটা বাজে উঠতো। ঘটনার পর থেকে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে ইউএনও তাহমিলুর রহমানের বদলীর। কিন্তু ইউএনওকে রক্ষায় আবার মরিয়া জাফলং তথা গোয়াইনঘাটের প্রভাবশালী একটি পরিবারের সদস্যরা। মন্ত্রীর অবর্তমানে এরা জৈন্তা-গোয়াইনঘাটের স্বঘোষিত মন্ত্রী।
এক কথায় অনেকে মনে করেন এই পরিবারের হাতেই জিম্মি গোয়াইনঘাটে আমলা থেকে থেকে কামলা আর রাজনৈতিবীদরা। ইউএনওর কিছুকিছু কর্মকান্ডে ইউএনও’র উপরমহলও বেশ ব্রিবত হয়ে তাকে অন্যত্র বদলির চিন্তা ভাবনায় যখন,ঠিক তখনই মন্ত্রীর খাসলোক জনৈক ব্যক্তি চান ইউএনও আরো কিছুদিন গোয়াইনঘাট থেকে যান। এনিয়ে নাকি মন্ত্রীর সাথে কথা-বার্তাও চলছে, এমন গুঞ্জন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে। এদিকে ইউএনও’র বিব্রত কান্ডে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলীর গাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সদস্য গোলাম কিবরিয়া হেলাল। ফলে ইউএনও ও তার অনুসারিরা বেজায় নাখোশ তার উপরে। যদিও জাফলংয়ের আসল ঘটনার জের ছেড়ে ঘটনার ডালপালা মেলতে শুরু করেছে স্থানীয়দের মাঝে। ফলে জাফলংয়ে পর্যটন নির্যাতনের ঘটনাটি চাপা পড়ে যাচ্ছে ধিরে-ধিরে। জেলা প্রশাসক ঘোষিত ফি/চাঁদা বন্ধের এক সপ্তাহ পাড়ি দিয়েছে ইতিমধ্যে।
নতুন করে কি আবার চাঁদা উত্তোলন শুরু হয়েছে এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে চান অনেকে। এদিকে মন্ত্রী মহোদয় উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তার কাছে ফি আদায়ের স্পষ্ট ব্যাখা চেয়ে যে চিটি দিয়েছিলেন,সেই চিটি ব্যাখার জবাবে কি থাকছে! আর কি ঘটছে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ভাগ্যে এটিই সর্বশেষ দেখার বিষয়।
সূত্রমতে, পর্যটন কেন্দ্র জাফলং-এ কেবল পর্যটকই নয়, সেখানকার দোকানদার, হোটেল রেস্তোরাঁ, যাত্রীবাহী নৌকা, ট্যুরিস্ট গাইড, ক্যামেরাম্যান, ভাসমান হকারকেও প্রতিদিন নির্দিষ্ট হারে চাঁদা দিতে হয়েছে।
গোলাম কিবরিয়া হেলালসহ অনেক আওয়ামীলীগ নেতার স্পষ্ট বক্তব্য , জাফলংয়ে পর্যটন উন্নয়ন কমিটির নামে ‘ইউএনও’র বাহিনী’ প্রকােশ্যে চাঁদাবাজি করেছে।
যদিও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমানের দাবী পর্যটকদের কাছ থেকে প্রবেশ ফি বাবদ সর্বমোট প্রায় ৬০ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে ১২ লাখ টাকা খরচ করা হয়েছে।
পর্যটকদের কাছ থেকে প্রবেশ ফি আদায়ের বাইরে গাড়ী পার্কিংয়ের জন্যে ৫০ থেকে ২০০ টাকা, পর্যটকদের বহনকারী নৌকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ টাকা। ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে ১০০ টাকা। চানাচুর, বাদাম, বরই,আমড়াসহ নানাজাত খাবার পণ্য বিক্রির ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে।
বেলুন -পুতুলসহ শিশুদের খেলনা সামগ্রী বিক্রেতারা প্রতিদিন ১০০ টাকা করে। প্রতিটি কাপড়ের দোকান প্রতিদিন ৩০০ টাকা। প্রতিটি হোটেল-রেস্তোরাঁ থেকে দিনপ্রতি ৪০০ টাকা, করে আদায় করেছে “স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী”। যে অর্থের পরিমান কয়েক কোটি টাকা। ইউএনওর সূত্রমতে এ পর্যন্ত ৬০ লাখ টাকা আদায় হয়েছে।
বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করা হয়। বাকী টাকা যাদেরকে ভলান্টিয়ারদের হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে-তাদেরকে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ৪১ লাখ টাকার মতো ব্যাংক একাউন্টে জমা রয়েছে।